যুক্তরাষ্ট্রের ৫০% শুল্কারোপের পর ভারতের কার্পেট রপ্তানিতে ধস

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫ সময়ঃ ৭:০৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:০৪ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কে ভারতের কার্পেটশিল্প ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। উত্তর প্রদেশের ভাদোহি—যা ভারতের ‘কার্পেট সিটি’ হিসেবে পরিচিত—সেখানে কয়েক শ রপ্তানিকারকের ব্যবসা কার্যত থমকে গেছে।

৭৮ বছর বয়সী অভিজ্ঞ রপ্তানিকারক সূর্যমণি তিওয়ারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর বার্ষিক ১০০ কোটি রুপির কার্পেট রপ্তানি সম্পূর্ণ থেমে গেছে। তিনি জানান, “এটা আমার ৫০ বছরের ব্যবসায় সবচেয়ে খারাপ সময়। দুই মাসের মধ্যে পরিস্থিতি না বদলালে পুরো শিল্পটাই ধ্বংস হবে।”

প্রথমে ৭ আগস্ট ২৫ শতাংশ এবং পরে ২৭ আগস্ট রাশিয়ার তেল আমদানির অজুহাতে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, রাশিয়া থেকে তেল কিনে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধকে উসকে দিচ্ছে।

কর্মসংস্থান সংকটে লাখো মানুষ

ভারতের কার্পেটশিল্প মূলত রপ্তানিনির্ভর। হাতে বোনা ও পারস্য ধাঁচের নকশা করা কার্পেট যুক্তরাষ্ট্রে খুবই জনপ্রিয়। পুরো শিল্পের বার্ষিক আয় প্রায় ১৬ হাজার কোটি রুপি (১৮৩ কোটি ডলার) এবং এতে ২৫ লাখ মানুষ কাজ করেন, যাঁদের অধিকাংশই তাঁতি। শুধু ভাদোহিতেই রয়েছে প্রায় ১,২০০ প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক, আর ১৪ লাখ মানুষের জীবিকা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত।

কিন্তু শুল্ক বৃদ্ধির ফলে অল্প সময়েই ছাঁটাই শুরু হয়েছে। অল ইন্ডিয়া কার্পেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজা খান জানান, ইতোমধ্যে এক লাখ মানুষ বেকার হয়ে গেছেন। আগামী দুই মাসে এই সংখ্যা সাত লাখে পৌঁছাতে পারে।

কার্পেট সেলাই শ্রমিক ফাতিমা সামির বলেন, আয় কমে যাওয়ায় তিনি ছোট মেয়েকে স্কুল থেকে সরাতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে প্রস্তুতকারক ইমতিয়াজ আনসারি জানান, তাঁদের কারখানায় কাজ সপ্তাহে তিন দিনে নেমে এসেছে, ৯০ শতাংশ অর্ডার বাতিল হয়েছে।

বাজার হারানোর শঙ্কা

কার্পেট রপ্তানি উন্নয়ন কাউন্সিলের পরিচালক পিয়ুষ বারনওয়াল বলেন, “আমাদের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র। তারা মোট রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশ নেয়। দেশীয় বাজার খুবই সীমিত। ৫০ শতাংশ শুল্কে এই শিল্প কার্যত মৃত্যুর মুখে।”

রপ্তানিকারক সঞ্জয় গুপ্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারত পিছিয়ে পড়লে তুরস্ক (১৫ শতাংশ শুল্ক) ও পাকিস্তান (১৯ শতাংশ শুল্ক) দ্রুত শূন্যস্থান পূরণ করবে। মোহাম্মদ জাকির হোসেনও বলেন, “দ্রুত সমাধান না হলে মার্কিন বাজারে আমাদের অংশ কমে যাবে।”

শিল্প থেকে শহরজুড়ে প্রভাব

স্থানীয় সাংবাদিক ওবায়দুল্লা আসরি জানান, “কারখানাগুলো ব্যাংক ঋণ নিয়ে কার্পেট তৈরি করে, কিন্তু বিক্রির অর্থ ফেরত পেতে সময় লাগে। অর্ডার কমে যাওয়ায় শুধু শিল্পই নয়, শহরের অর্থনীতিও ধসে পড়ছে। দোকানপাট খালি হয়ে যাচ্ছে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারালে ভারতের হাতে তৈরি কার্পেটশিল্প ধীরে ধীরে তুরস্ক ও পাকিস্তানের কাছে স্থান হারাবে। আর এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে লক্ষ লক্ষ দিনমজুর তাঁতি ও ছোট প্রস্তুতকারক পরিবার।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G